চঞ্চল চৌধুরীরা ভারত প্রেমে বিভোর । বাংলেদেশে থেকে বাংলাদেশীদের নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য

 চঞ্চল চৌধুরীরা (Chanchal Chowdhury) ভুলে যান বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। এ দেশের মানুষেরা স্বাধীন। খেলায় প্রতিবেশী দেশকে সমর্থন করতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ইন্ডিয়ানরা কি বাংলাদেশ দলকে সমর্থন করে? নাহ। আমি তো দেখেছি বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলায় বাঙালির ইডেন গার্ডেনে ভারতীয়রা পাকিস্তানকে সমর্থন দিচ্ছে। যে যেই দলকে সমর্থন করে, সেই দল জিতলে উল্লাস করবেই। ক্রিকেটে ভারত, পাকিস্তানের পর অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্টারই বেশি।

ব্যাপারটা এরকম সরল নয়। বাংলাদেশের মানুষ এখন ভারতকে পছন্দ করে না। এর পেছনে অনেক অনেক কারণ, ক্রিকেটীয় কারণ খুব সামান্য। ক্রিকেট খেলাটাকে নিজেদের জিম্মায় রাখা, আইসিসি ও এসিসিকে কব্জা করে রাখার কারণে কেবল বাংলাদেশ না সারা দুনিয়াতেই ক্রিকেটপ্রেমীরা ভারতকে পছন্দ করে না। বাংলাদেশ দলের বাইরে বাংলাদেশে ইন্ডিয়া ক্রিকেট দলের সমর্থকই বেশি--এই সমর্থকরাও এখন ইন্ডিয়া হারাতে উল্লাস করে। ক্যানো এমনটা হলো? কারণটা রাজনৈতিক, কারণটা স্বদেশপ্রেম। সারাক্ষণ বাংলাদেশের ওপর খবরদারি, খরানের সময় তিস্তার ন্যায্য পানি না দেওয়া এবং বর্ষায় অতিরিক্ত পানি ছেড়ে বন্যা উপহার দেওয়া, সীমান্ত-সন্ত্রাস, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে যথেষ্ট সম্মান না দেওয়া, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মানুষের ওপর ১৫ বছর ধরে জুলুমকারী স্বৈ*রশাসককে টিকিয়ে রাখা, বিজেপি সরকারের বাংলাদেশনীতি ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভারতকে পছন্দ করে না। রাগ-ক্ষোভগুলি মেটায় ইন্ডিয়া ক্রিকেট দল হারলে, উল্লাস করে। এর পেছনে ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা তেমন নাই।
বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারত হারার পর বাংলাদেশে অনেক মানুষ উল্লাস করেছে। এদের একটা অংশ অস্ট্রেলিয়া সমর্থক, আরেকটা অংশ ভারতের হারাতেই খুশি। এই উল্লাসের জন্য অনেক ভারতীয় বাংলাদেশকে ভারতের এটাচড টয়লেট বলছেন, কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন তুলে দেওয়া হোক দাবি করেছেন, চিকিৎসা এবং বেড়ানোর জন্য বাংলাদেশিদের ভিসা না দেওয়ার দাবি তুলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহায়তা করা উচিত হয়নি টাইপ কথাও বলছেন। তাদেরকে বলি, বাংলাদেশের প্রতি আপনাদের মনোভাব কেমন এই এটাচড বাথরুম, বাংলাদেশকে কাংলাদেশ বলায় বোঝা যায়। চিকিৎসা আর বেড়ানোর জন্য ভারত ভিসা দেওয়া বন্ধ করলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরাট উপকার হবে, আর ভারতের অর্থনীতি ধসে পড়বে। ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রায় অর্ধেক উৎস বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী আর পর্যটকরা। ভিসা নিতেও টাকা দিতে হয়। ভিসা নিতে গিয়ে, ভিসা নিয়ে সীমান্ত পাড় হতে, সীমান্ত পাড় হয়ে ভারতে ঢুকে হোটেল পেতে সাধারণ বাংলাদেশিদের যেরকম হয়রানির শিকার হতে হয় তা সারা দুনিয়ায় নজিরবিহীন। এত ভালো ভালো মেডিকেল কলেজ যে দেশে, যে দেশের ডাক্তার-নার্সরা অত্যন্ত সম্মানের সাথে দুনিয়াব্যাপি কাজ করে, সেই দেশের মানুষদের চিকিৎসা করাতে কেন প্রতিবেশি দেশে যেতে হয়! কারণ বিরাট একটা সিন্ডিকেট বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থাকে টালমাটাল করে রেখেছে। কার স্বার্থে? এ দেশের রোগীরা দেশেই সুচিকিৎসা পেলে বিরাট অঙ্কের টাকা দেশেই থাকবে। কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন না থাকলে তেমন কিছুই আসে যায় না, কিন্তু বাংলাদেশে বইয়ের দোকানদাররা কলকাতার বই বেচা বন্ধ করে দিলে পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রকাশকই হয়ত টিকতে পারবে না। আর স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা? সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ, সেই ঋণ শোধ করতে তো আমরা ভারতের গোলাম থাকবো না। কোনো রাষ্ট্রের গোলাম হতে আমরা স্বাধীন হইনি।
ভারতীয়রা ক্ষোভে অনেককিছুই বলছে, তা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বাংলাদেশে বসে অনেকে বলছে বলিউডের সিনেমা দেখা, ভারতের চাল-ডাল-পেঁয়াজ খেয়ে তাদের হারে উল্লাস করা কিভাবে সম্ভব! আরেহ চো*দনারা, সিনেমা ফ্রি দেখে? পেঁয়াজ, চাল-ডাল ভারত আমাদেরকে ফ্রি দেয়? টাকা দিয়ে আমদানি করা লাগে। এর সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঢেলে দিচ্ছে! চঞ্চল চৌধুরীর মতন অনেকেই বলছেন, ভারতের হারে যারা উল্লাস করে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানীদের রেখে যাওয়া বংশধর! কিরকম অপমাজনক কথা! মানে কি হে, ভারতকে পছন্দ না করলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী হয় কীভাবে? যাদেরকে আপনারা পাকিস্তানের রেখে যাওয়া বংশধর বলছেন, তারাই ভারতীয় আগ্রাসন থেকে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার ব্যাপারে সচেতন এবং চিন্তিত।
সে গত পরশু ভারতের এক মিডিয়াকে বলেছে যে বাংলাদেশি ক্রিকেট খেলায় ভারতবিরোধী সে নাকি দেশদ্রোহী। অস্ট্রেলিয়ার জয় যে উদযাপন করেছে সে ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধী, তার এই আনন্দ উদযাপন নাকি ৭১ এর জেনেটিক বিদ্বেষ।কী জঘন্য প্রলাপ। চঞ্চল চৌধুরী, আপনি ভারতীয় মিডিয়ায় বলছেন ভারতের পরাজয়ে উল্লাস করা বাংলাদেশিরা পাকিস্তানিদের রেখে যাওয়া জিন বহন করে, মানে দেশের নব্বই শতাংশ মানুষের রক্তই দূষিত! চঞ্চল চৌধুরী, আপনি প্রমাণ করলেন আপনি বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিগোষ্ঠী আরএসএস-এরও লোক। আপনি ওদের ভাষাতেই কথা বলেছেন। যেন আপনি বাংলাদেশের না, ভারতের নাগরিক এবং আরএসএস-এর প্রতিনিধি।
চঞ্চল চৌধুরীর আসল নাম "সুচিন্ত পাল"। কারো নাম দিয়ে কখনো কারও ধর্ম বর্ণ বিচার করা যায়না। কিন্তু সে তার নাম দিয়ে ধর্মীয় আইডেন্টিটি হাইড রাখতে চায়। কারণ ধর্মে হিন্দু জানলে সম্ভবত তার ফ্যান ফোলোয়ার্স কমে যাবে এই আশঙ্কায়।
বছরখানে আগে এই চঞ্চল চৌধুরীর তার সিঁদূর পরা মায়ের ছবি ফেইসবুকে দেয়াতে হাজারের মাঝে গুটিকয়েক মানুষ কমেন্ট করেছিলো " আপনি হিন্দু তা জানতাম না"। মানুষের এই সামান্য কিউরিউসিটি থেকে প্রশ্নটাকে সে মানতে পারে নাই। সে এইটাকে তার মায়ের প্রতি মানুষের অশ্রদ্ধা গালিগালাজ ও সাম্প্রদায়িক আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করে।
এমনকি এই লোক সামান্য কয়েক কমেন্টকে কেন্দ্র করে পুরো দেশের মুসলমান সমাজকে হিন্দুবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী প্রমাণ করার চেষ্টা করে এবং মিডিয়ার সামনে এসে এক ধরণের একটা ভিক্টিম রোল প্লে করে। মিডিয়া তিলকে তাল বানিয়ে তুলে ধরে।
বিগত সময়ে এই চঞ্চল চৌধুরী বলেছিলো "ধর্ম ছেড়ে মানুষ হতে", তার ভাষ্যমতে যারা ধর্ম মানে তারা অমানুষ। অথচ সে নিজে তার ধর্ম ছাড়ে নাই। পহেলা বৈশাখে বলে বেড়ায় মানুষকে বাঙালি হতে,অথচ তার মনে প্রাণে ভারতপ্রেম।
অথচ ভারতীয়রা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশিদের সাথে কিরূপ আচরণ করে, বাংলাদেশি মুসলিম দেখলেই গ্যালারিতে ভারতীয়রা যে গালাগালি করে, পতাকা ছিড়ে ফেলে, টাইগার শোয়েবের বাঘ ছিড়ে ফেলে, অকথ্য ভাষায় হ্যারেজমেন্ট করে কিংবা সীমান্তে বছরের পর বছর শত বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা সহ ভারতীয়দের অমানবিক আচরণ নিয়ে এদের কোন আলাপ নেই।
আধা বাটি তেল মিশ্রিত চেতনা আর দুই চামচ আধিপত্যবাদী ভারতবন্দনা এক চামচ মুসলিমবিদ্বেষ মিশিয়ে এই লোক কলকাতা গিয়ে বাংলাদেশিদের নামে অভিযোগ করে আসছে। যে বাংলাদেশিরা তাকে চঞ্চল চৌধুরী বানিয়েছে তাদেরকে সে ভারতবিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করছে।
চঞ্চল চৌধুরীরা এরা সমাজের ভয়ংকর বিপদজনক। মানুষের ট্রল থেকে বাঁচতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে গাজা সম্বলিত প্রোফাইল আপডেট করেছে যাতে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলতে পারে। জনবিরোধী এই অভিনেতাকে বয়কট করার সময় এসেছে।

Post a Comment

0 Comments