শ্রীলঙ্কার সাথে ৩য় টি২০ ম্যাচ হারার কারন সম্পর্কে Nazmul Abedeen Fahim যা বললেন

 ১ম টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশ অল্পের জন্য শ্রীলঙ্কার কাছে হারে। ২য় টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশ সহজভাবেই জয় পায়। যার কারনে ৩য় ও শেষ টি২০ ফাইনালের রুপ নেয়। প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা ১৭৪ রান করে , জবাবে ১৭৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ । আর সে জায়গাতেই আগাত আনেন নুয়ান তুসারা। হ্যাট্টিকসহ ৫ উইকেট একাই তুলে নেন। এই ম্যাচে বাংলাদেশ পুরাই বিপর্যস্ত ছিলো। আই এই ম্যাচ হারার সম্পর্কে Nazmul Abedeen Fahim যা বললেন --

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাত ম্যাচে ছয় উইকেট। এই নিয়েই খেলতে নেমেছিল নুয়ান তুসারা। বোলিং ইকনমিও প্রায় নয় এর কাছাকছি। সংখ্যা গুলি মোটেই ভয় পাইয়ে দেয়ার মত নয়। তবু তার হাতেই কুপোকাত হয়ে গেল বাংলাদেশ। স্লিঙ্গিং একশন, লেইট সুইং এবং দারুন নিয়ন্ত্রন। এর আগেও ওর বোলিং দেখেছি, কিন্তু এতটা সফল হতে দেখিনি। কিভাবে ওকে খেলতে হবে এটা জানা থাকলে ব্যাপারটা এতটা কঠিন হবার কথা নয়। যদি তাই হত তাহলে ওর স্ট্যাট আরও ভাল হত। আমি নিশ্চিত ওকে এই সিরিজেই আমরা আবার দেখব। আমার বিশ্বাস তখন ওকে আমাদের ব্যাটারদের আরও ভাল ভাবে সামাল দিতে দেখব। ওকে মোকাবিলা করার জন্য আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল, যা আমরা একেবারেই নেই নি। আমার এমনটাই মনে হয়েছে।

তারপরও সৌম্য সরকারের সুযোগ হয়েছিল বিপরিত প্রান্ত থেকে পুরো ওভারটা দেখার এবং একটা ব্যাটিং স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে নেয়ার। অথচ স্ট্যাম্প লাইনের একটু সুইং করা বলটাকে একটুও সম্মান দেখানোর প্রয়োজন মনে করল না সৌম্য।
এইগুলি কিন্তু সুযোগ। বিরূপ পরিস্থিতি থেকে কিভাবে বের হয়ে আসতে হয় তা শেখার, নিজের আস্থাকে মজবুত করার এবং নিজের যগ্যতা প্রমাণেরও। এই চ্যালেঞ্জ উপভোগ করতে না পারলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা মুশকিল। আমি শুধু সৌম্য নয়, সবার কথাই বলছি। সম্মানের এবং গৌরবের দাবীদার কেবল তারাই হতে পারে যারা এই প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করতে পারে।
তবে এই দুর্ঘটনা না ঘটলে আমরা রীশাদের ব্যাটিং এর এই রুপ হয়তো দেখতে পেতাম না। তাসকিনের কথাও বলতে হয়। দেখিয়ে দিল যে সেও ফেলনা নয়। রীশাদকে আগেও দুই একবার ক্লিন হিট করতে দেখেছি তবে এবারকার ব্যাপারটা একেবারাই আলাদা। ওর এই সক্ষমতা আমাদের দারুন কাজে আসবে। তবে আজকের এই ইনিংসের উপর ভিত্তি করে ওর সম্পর্কে কোন চূড়ান্ত মন্তব্য করতে রাজী নই। সেটি জাকিরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। রীশাদ কোন ধরনের বলে কোথায় হিট করে তা নিশ্চয়ই বিপক্ষ দলও দেখেছে। পরের বার ওরা অঙ্ক কষেই নামবে। এই প্রসঙ্গে আবুল হাসান রাজুর কথা মনে পড়ছে। প্রথম টেস্টেই দশম ব্যাটার হিসেবে খেলতে নেমে শত রান। কিন্তু বেশিদূর এগোয়নি ক্যারিয়ার। আশাকরি রীশাদ বা জাকিরের বেলায় তা হবে না।
খেলার ধরন বা প্রসেসের মধ্যে যদি ধারাবাহিকতা না থাকে তাহলে পারফরম্যান্স অধারাবাহিক হবে এটাই স্বাভাবিক। নিজেকে বেশী গুরুত্ব দিতে গিয়ে অকারনেই চাপের মুখে পড়ে যাচ্ছে লিটন। ওর খেলার কোন প্যটারন চোখে পড়ছে না। একেক দিন একেক রকম। স্বাভাবিক খেলাটাই ওর খেলা উচিত। আউট হওয়া যাবেনা এই নেতিবাচক ভাবনা নেতিবাচক এপ্রোচের জন্ম দেয়। ইতিবাচক হতে পারলে সেটিই ওর খেলার মধ্যে গতিশীলতা নিয়ে আসবে। ওর ধারাবাহিক হওয়াটা খুবই জরুরী। তবে আজ ব্যাক ফ্লিক করে রান আউট করা টা দারুন ছিল বলতেই হবে।
ধারনা ছিল টসে জীততে পারলে ব্যাটিং নেবে বাংলাদেশ। বোলিং নিয়ে কি লাভ হল নিশ্চিত নই। তারপরও নবম ওভারে দুই উইকেটে ৬৩ রান, মটামুটি নিয়ন্ত্রণেই ছিল শ্রীলঙ্কা। পরের ওভারেই মুস্তাফিজের ১৮ রানে খেই হারিয়ে ফেললো বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের কোনটিতেই মুস্তাফিজকে কার্যকরী হতে দেখলাম না। তিন ম্যাচে দুই উইকেট, ইকনমি প্রায় এগার। ব্যাপারটা ভেবে দেখার মত। ডানহাতি ব্যাটারদের ওভার দ্যা উইকেট বল করার সময় ক্রিজের প্রায় শেষ মাথা থেকে বল করলে ওর সফল হবার সুযোগ অনেকটাই কমে যায়। ওর স্ট্যাট না দেখেই অনুমান করা যায় যে বাহাতির তুলনায় ডানহাতির বিরুদ্ধে ও বেশী খরুচে।
শরিফুল, তাসকিন দুজনই আজ ভাল করেছে। পাওয়ার প্লে, স্লগ ওভার সব মিলিয়ে দুজনের প্রাপ্তি আট ওভারে ৫৩ রান দিয়ে তিন উইকেট। শেখ মাহদিকে নিয়ে আগের বারও বলেছি। আঠার তম ওভার ওকে করতে না দিয়ে রীশাদকে দেয়া প্রমান করে যে ওর উপর থেকে অধিনায়কের আস্থা কিছুটা কমেছে। এই সিরিজে মাহদিকে একবারও দেখিনি ডানহাতি ব্যাটারদের বিট করতে যা আগে প্রায়ই দেখতাম। রীশাদ ভাল বল করেছে। ওর প্রচুর খেলা দেখা উচিত। সিচুয়েশন অনুযায়ী বল করার ব্যাপারে জানতে পারবে। গুগলিতে ওকে আরও পারদর্শী হতে হবে। হাসারাঙ্গা যে দুটি উইকেট পেয়েছে তা কিন্তু গুগলিতেই।
ইনিংসের মাঝপথে এসে শান্তর উইকেট নেয়ার চেষ্টা ভাল লেগেছে। কম রানে আটকে রাখার এটিই একমাত্র উপায়। সৌম্য আজও এক ওভার বল করল। মাহমুদুল্লাহ ক্যাচ টা ধরতে পারলে ওর বোলিং ফিগারটা হত সাত রানে এক উইকেট। বল বাই বল বিচার করলে বেশ ভাল ছিল ওভারটি। আরও একটা ওভার বোধহয় ওকে দিয়ে করানো যেত। তাতে শেষের দিকে শান্তর হাতে একাধিক বোলিং অপশন থাকতো।
এই সিরিজে টপ ব্যাটার বা বোলার কিন্তু ওরাই। বিপিএলের টপ ব্যাটারদের খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিজেদের সবকিছু নিয়ে আমাদের যে অতি মূল্যায়ন এটাকেও দারুন দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে এখন।
আমার ধারনা, বিপক্ষ দলের খেলয়াড়েদের পারফরম্যান্স বা বিশেষ বৈশিষ্ট্য অথবা খেলার কন্ডিশন, ইত্যাদি নিয়ে আমাদের খেলয়াড়েরা নিজের উদ্যোগে খুব একটা রিসার্চ করে না। আপডেটেড থাকা এবং প্রো-একটিভ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। প্রতিদন্ধির তুলনায় এক ধাপ এগিয়্যে থাকতে চাইলে চোখকান খোলা রাখতেই হবে।

Post a Comment

0 Comments